
কামাল একজন ফেসবুক সেলার – ফেসবুক এর মাধ্যমে তিনি ফ্যাশন আইটেম বিক্রি করেন। ইদানিং ব্যবসা নিয়ে কামাল বেশ দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন। ফেসবুকে তার একটি ভালো কাস্টমার বেজ আছে, বিক্রিও বেশ ভালোই হয়।
কিন্তু আজকাল ফেসবুক হুটহাট করে পলিসি, অ্যালগরিদম বদলে ফেলে – মাঝে মাঝে পেজ রেস্ট্রিক্ট করার ওয়ার্নিংও দেয়। যদি পেজে কোন একটা ঝামেলা হয়, তাহলে তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ফেসবুকের উপর ইদানিং আগের মত আর ভরসা করতে পারছেন না কামাল।
এই সমস্যা সমাধানে কামাল ফেসবুক সেলারদের মধ্যে জনপ্রিয় কিছু গ্রুপ এ পোস্ট দিলেন । তার মতো যারা ফেইসবুক কেন্দ্রিক ব্যবসা করেন তাদের সাথে কথাবার্তা বললেন। সবারই এক কথা – “ভাই, নিজের একটা ওয়েবসাইট করতে হবে।একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট থাকলে ব্যবসার উপর নিয়ন্ত্রণ, সুনাম আর বিক্রি বাড়ে। তবে ওয়েবসাইটে ব্যবসা করতে হলে কিছু সময় এবং টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন।”
টাকা-পয়সা খরচ করতে বা ওয়েবসাইট নিয়ে সময় দিতে কামালের কোন সমস্যা নেই, কিন্তু নিজস্ব ই-কমার্স ওয়েবসাইট বানালে আসলেই কি তার কোন লাভ হবে? নাকি শুধুমাত্র ফেসবুকের উপর ভরসা করাই সঠিক কৌশল?
শুধু কামাল নন, সারা দুনিয়া জুড়ে লাখ-লাখ ব্যবসা এই দুশ্চিন্তা মধ্যে দিন যাপন করছে। তাই, আজ আমরা ফেসবুক পেজ আর ই-কমার্স ওয়েবসাইটের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করবো। এর সাথে ধরনা দেবার জন্য চেষ্টা করবো – আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে কোন মাধ্যম অধিক লাভজনক ও কার্যকর।
শুরুতেই বলে নেই, ই-কমার্স ব্যবসা কি জিনিস? মূলত ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি এর মাধ্যমে পণ্য ও সেবার ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি করাকেই ই-কমার্স বলে। ইলেকট্রনিক কমার্সকে, অনেকে আবার ই-বাণিজ্যও বলে। বাংলাদেশ ফেসবুকের উপর ব্যবসায়িরা অধিক নির্ভর করেলও, উন্নত বিশ্বে নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই বেশির ভাগ ই-কমার্স ব্যবসা করা হয়ে থাকে।
ফেইসবুক পেজ নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। দ্রুত ন্যূনতম বা আপাত দৃষ্টিতে বিনা খরচে কাস্টমারদের কাছে প্রোডাক্ট পৌঁছে দেয়াই এর প্রধান আকর্ষণ।। এটা বললে ভুল হবে না যে, অনেক অভিজ্ঞ ব্যবসাও প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করছে।
ফেসবুক শপ বা কমার্স (Facebook shops, commerce) তুলনামূলকভাবে নতুন। বিক্রেতাদের চাহিদার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ২০২০ সালে ফেসবুক শপস আত্মপ্রকাশ করেছিল। যারা মার্কেটপ্লেসের ইতিমধ্যেই অনেক বড় এবং ফেসবুক ব্যবহারকারী বেসের সুযোগ ব্যবহার করতে চায় – তাদের টার্গেট করে ফেসবুক এই সুবিধাটি নিয়ে আসে।
এটির উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্যিক বিক্রেতাদের বৃহত্তর ভলিউমে মার্চেন্ডাইজিং এবং অর্ডার পরিচালনার জন্য আরও উপযুক্ত চ্যানেলে নিয়ে যাওয়া।
একটি ফেসবুক শপ হল একটি স্টোরফ্রন্ট, যেখানে বিক্রয়ের জন্য আলাদা-আলাদা পণ্য পেজ, সম্পূর্ণ পণ্য ক্যটাগরি পেজ এবং একটি শপিং কার্ট থাকে। কিন্তু এটি শুধুমাত্র Facebook ইকোসিস্টেমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আবার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং লম্বা। ক্রেতাকে এখনও পণ্য খুঁজে পেতে এবং অর্ডার করার জন্য বেশ কয়েক যায়গায় ঘুরতে হয়। উপরন্তু ক্রেতাদের খুঁজে পেতে আপনাকে ফেসবুকে পণ্যের বিজ্ঞাপন দিতে হবে। বিজ্ঞাপন ছাড়া পণ্যের বিক্রি সম্ভবনা খুবই সীমিত।
Facebook শপ একটি ভাল প্ল্যাটফর্ম এবং আজ, ৫০ মিলিয়নেরও বেশি ছোট এবং মাঝারি ব্যবসার পেজ রয়েছে যারা ব্যবসা চালানোর জন্য Facebook স্টোরের উপর নির্ভর করে।
যাইহোক, যদি আপনি একটি নাম, ব্র্যান্ড তৈরি করতে এবং ব্যবসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চান তবে একটি Facebook স্টোর আপনার ব্যবসার পুরো কৌশল হতে পারে না। মার্কেটিং, বিক্রয় এবং মুনাফা অর্জনের অনেকগুলো উপায়ের মধ্যে, এটি মাত্র একটি।
ব্যবহারকারিদের তথ্য বিক্রি, প্রাইভেসি নষ্ট এবং ইউরোপ-আমেরিকান প্রচলিত আইন লঙ্ঘনের কারনে, ২০১৮ সালে ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। বেশ কয়েক বছর মামলা চলার পর, ২০২২ সালে ফেসবুক দোষ স্বীকার করে প্রায় ৭২৫ মিলিয়ন ডলার, যার বর্তমান বাংলাদেশের টাকায় প্রায় ৭.৮৮ হাজার কোটি টাকা জরিমানা দেয়।
মামলার পর থেকে ফেসবুক তাদের টপ ম্যনেজমেন্টে বিশাল রদবদল আনে। এমনকি কোম্পানি নাম ফেসবুক পরিবর্তন করে মেটায় (Meta) রুপান্তর হয়। এরপর থেকে ফেসবুক পেজগুলোর উপর নজরদারি অনেকগুন বেড়ে যায়। এই নজরদারি প্রায় পুরোটাই করে কম্পিউটার। কিন্তু কম্পিউটার বাংলাদেশের ভাষা বা সংস্কৃতি বোঝে না। তাই প্রায়ই ভুল করে ভালো-ভালো পেজ এবং অ্যাড আকাউন্ট কে বিনা দোষে রেস্ট্রিক্ট করে ফেলে।
এই ভুলের বিরুদ্ধে আপিল করার পর মানুষ নয়, আবার সেই কম্পিউটারই রিভিউ করে এবং ফলস্বরূপ আজীবন রেস্ট্রিক্ট (Permanent ban) করা হয়। এরপর একজন ব্যবসায়ীর আর কিছুই করার থাকে না। অনেক চতুর ব্যক্তি এই সময় ব্যবসায়ীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভুল বোঝায় এবং বিভিন্নভাবে আকাউন্ট রেস্ট্রিক্ট ঠিক করার চুক্তি নেয়। তারা বিশাল অঙ্কের টাকাও প্রতারণার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আদায় করে।
আমরা এত দিনের অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি পার্মানেন্ট রেস্ট্রিক্ট করা আকাউন্ট উদ্ধার করার এখনও পর্যন্ত কোন সাধারন সমাধান নেই। আমেরিকান আদালতে মামলা করে হয়তো আপনি উদ্ধার করতে পারেন।
সত্যি বলতে, অতি বৃহৎ বিজ্ঞপন দাতা, আমেরিকান-ইউরোপিয়ান নাগরিক এবং ক্ষমতাশালী ছাড়া ফেসবুক সরাসরি কাস্টমার সাপোর্ট দেয়ার ঘটনা এখন খুবই বিরল। আসলে আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকলে ফেসবুক কাউকেই এখন আর তাদের প্রতিষ্ঠানের সত্যিকারের মানব কর্মচারী দিয়ে সাপোর্ট দেয় না।
এখন এমন একটা অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, ফেসবুকের কম্পিউটারের বিন্দুমাত্র সন্দেহ হলে, বিশেষ করে বাংলাদেশি আকাউন্টের ক্ষেত্রে কোন বাছ-বিচার ছাড়াই যে কাউকেই ব্যান অথবা রেস্ট্রিক্ট করে ফেলে। আমেরিকায় এটাকে এখন ক্যান্সেল কালচার (Cancel culture) বলা হয়।
অনেক ছোট-বড়, মাঝারি ব্যবসা শুধুমাত্র ফেসবুক পেজের উপর নির্ভর না করে নিজস্ব ই-কমার্স ওয়েবসাইট দিয়ে অনলাইন ব্যবসা করে। অর্থাৎ তারা ব্রান্ড ইমেজ, অধিক বিক্রি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ফেসবুক পেজের সাথে সাথে ই-কমার্স ওয়েবসাইট দিয়েও ব্যবসা করেন।
সেই ক্ষেত্রে ফেসবুক পেজ একমাত্র ব্যবসার উপায় হয় না, বরং অনেকগুল মার্কেটিং মিডিয়ার একটিতে রুপান্তরিত হয়। সকল মিডিয়া হতে ভিজিটর ওয়েবসাইটে যায় এবং সেখান থেকে কেনা কাটা সম্পন্ন করে।
উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায় সব প্ল্যাটফর্মেরই ভালো-মন্দ দিক আছে। তাই আপনার অবস্থান আর পরিস্থিতিই নির্ধারন করবে আসলে কোনটি আপনার জন্য বেশি ভালো। আমরা কিছু সাধারন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা এবং সাজেশন দিব।
ফেসবুক স্টোর বা অন্য কোন সোশ্যাল মিডিয়া স্টোর মূলত আপনাকে তাদের প্ল্যাটফর্মে আপনার পণ্য এবং পরিষেবাগুলিকে প্রদর্শন করতে দেয়। এটি বিক্রয় অর্জনের একটি কার্যকর উপায়। কিন্তু, এর সম্পূর্ণ উপযোগিতা বিচারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
ফেসবুক পরিচিত প্ল্যাটফর্ম এবং বিনামূল্যে পাওয়া যায় বলে, আমরা একে অতিরিক্ত মূল্যায়ন করার প্রবণতা রাখি। তারা যদি একদিন বন্ধ হয়ে যায়? আপনার অভিযোগ করার অধিকার থাকবে না। মনে রাখবেন, আপনি সেই প্ল্যাটফর্মের একজন ব্যবহারকারী, শেয়ারহোল্ডার বা মালিক নন। তারা আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে, বা ক্ষতির প্রতি দায়বদ্ধ নয়। অবশেষে, আপনি প্রচুর সংখ্যক গ্রাহক হারাবেন এবং রাতারাতি ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।
অনেক সফল ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মতো আপনি আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক পাঠাতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারেন। তারপরে আপনি গ্রাহকদের তালিকা রাখতে পারেন এবং প্রয়োজনে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
অন্য কারো প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা গড়ে তোলার চেয়ে নিজের কিছুতে বিনিয়োগ করা বেশী যুক্তি সংগত। এই কারণেই আমরা প্রত্যেক ব্যবসার মালিককে এমন একটি ওয়েবসাইটে বিনিয়োগ করার জন্য সুপারিশ করি, যা একটি স্থায়ী শক্তিশালী ডিজিটাল উপস্থিতি নিশ্চিত করে, যা অনলাইনে আপনার ব্যবসার ব্র্যান্ডিং ও বিক্রি বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
দেশী-কমার্সের ই-কমার্স ওয়েবসাইট (e-commerce website) তৈরি, অপারেশন ম্যানেজ এবং মার্কেটিংসহ সকল ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে। আপনি যে কোন প্রয়োজন বা জিজ্ঞাসায় আমাদের যোগাযোগ করতে পারেন +8801766 681318 নম্বরে অথবা https://amatullah.us/ ই-মেইল ঠিকানায়।
ফেসবুক অ্যালগরিদম কিভাবে কাজ করে জানেন কি? ফেসবুক পেজে পোস্ট করছেন কিন্তু সেটি বেশি মানুষকে রিচ করছে না অথবা অডিয়েন্স সেটির সাথে এঙ্গেজ হচ্ছে না, এমন সমস্যার মধ্য দিয়ে বর্তমানে প্রায় সবাই যাচ্ছেন। কিভাবে আমরা এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে...
আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর শপিংকার্টে কেন প্রোডাক্ট অ্যাড (যোগ) করছে না? আপনার ওয়েবসাইটে প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাফিক কিন্তু তারা কেউ কেনাকাটা করছে না।এমন পরিস্থিতি যদি আপনার সাথে ঘটে তবে আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর ঠিক ভাবে বুঝে উঠছে না ওয়েবসাইটে ল্যান্ড করার পরে...
সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং বা Search Engine Marketing (SEM) হলো ব্যবসা বৃদ্ধি এবং নতুন গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় গুলোর মধ্যে একটি। দীর্ঘমেয়াদে ট্র্যাফিক আকর্ষণ করার জন্য অর্গানিক মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কখনও কখনও, SERPs বা Search Engine Result...
Comments (0)